রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫০ অপরাহ্ন
কালের খবর ডেস্ক : ‘মি টু’ ক্যাম্পেইনের অন্যতম শক্তিশালী কন্ঠস্বর ইটালীয় অভিনেত্রী আসিয়া আর্জেন্তোর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি এক কিশোর অভিনেতার সঙ্গে ‘সেক্স’ করেছিলেন। ফাঁস হওয়া এক মুঠোফোন বার্তায় বিষয়টি নিজেই স্বীকার করেছেন তিনি।
গত রবিবার নিউইয়র্ক টাইমস একটি প্রতিবেদনে জানায় যে, তাদের হাতে কিছু নথিপত্র এসেছে যা থেকে জানা গেছে, এই ঘটনা যাতে প্রকাশ না হয় সেজন্য আদালতের বাইরে অর্থের বিনিময়ে মীমাংসার চেষ্টা করেছিলেন আসিয়া আর্জেন্তো। যে মাসে আর্জেন্তো ‘মি টু’ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে হলিউডের প্রযোজক হার্ভে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন, ঠিক তার পরের মাসেই জিম বেনেত আদালতের শরণাপন্ন হন আর্জেন্তোর বিরুদ্ধে তাকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ নিয়ে। ঐ অভিনেত্রী ও পরিচালকের বিরুদ্ধে যখন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন ‘আউট অফ কোর্ট সেটেলমেন্ট’-এর আওতায় বেনেতকে ৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার দিতে রাজি হন আর্জেন্তো। প্রথম দফায় এ বছরের এপ্রিলে তাকে ২ লাখ ডলার দিয়েছেন তিনি। তবে চুক্তিতে শর্ত ছিল, এই ঘটনার কথা কোথাও কখনো উল্লেখ করা যাবে না।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হোটেলে আর্জেন্তো ও বেনেতের মধ্যে যৌন মিলন হয়, যখন বেনেতের বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। ২০০৪ সাল থেকেই তারা একে অপরের পরিচিত। ঐ বছর আর্জেন্তো পরিচালিত একটি চলচ্চিত্রে শিশু অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছিলেন বেনেত।
রবিবার নিউইয়র্ক টাইমসে ঐ প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার পর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
মঙ্গলবার সাংবাদিকরা আর্জেন্তোকে এই অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি ব্যাপারটি বেমালুম অস্বীকার করেন। বলেন, বেনেতের সাথে তাঁর সম্পর্কটা বন্ধুত্বের, এর বেশি কিছু নয়।
কিন্তু বুধবার মুখ খোলেন জিমি বেনেত। ইনস্টাগ্রামে আর্জেন্তোর সাথে তোলা একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, তখন তাঁর বয়স অল্প ছিল, তাই এই ঘটনা নিয়ে লজ্জায় এবং ভয়ে মুখ খোলেননি। এই অভিনেতা এবং মিউজিশিয়ান লেখেন, ‘আমি সবার সামনে নিজের কাহিনি তুলে ধরতে চাইনি, কারণ, ভেবেছিলাম, যে আমার সাথে এই আচরণ করেছে লড়াইটা তার সাথেই হওয়া উচিত। আমার মনে হয়েছে, ১৭ বছরের একজন কিশোরের দৃষ্টিতে এটাকে তারা অপরাধ বলে মনে না-ও করতে পারে, বা আমাকে দোষ দিতে পারে। ’
বুধবার রাতে জনপ্রিয় সেলিব্রেটি ওয়েবসাইট ‘টিএমজেড’ আর্জেন্তো এবং তাঁর এক বন্ধুর মধ্যে মুঠোফোনালাপ প্রকাশ করে। সেখানে কিশোর বেনেতের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন ইটালীয় অভিনেত্রী। তবে সেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, বেনেত তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং বেনেতের বয়স যে তখনো ১৮ হয়নি, সেটা তিনি জানতেন না। বেনেতের আইনজীবীর কাছ থেকে নোটিশ পাওয়ার পরই তিনি সেটা জানতে পারেন। তিনি আরো লিখেছেন, ‘যখন তার সাথে আমার যৌন মিলন হয়, তখন বিষয়টি আমার কাছে খুবই অদ্ভুত লেগেছিল। মানুষ কিছুই জানে না। তাঁরা সেটাই বিশ্বাস করছে, যেটা নিউইয়র্ক টাইমসে ছাপা হয়েছে। আসলে বেনেতে পাগলের মতো আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, সেটা ধর্ষণ নয়। কিন্তু আমি একেবারেই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। সে আমাকে বলেছিল, ১২ বছর বয়স থেকে আমাকে নিয়ে সে নানা কল্পনায় বিভোর থাকত। ’ আর্জেন্তোর বন্ধু প্রশ্ন করেছিলেন, তখন কেন বিষয়টি নিয়ে কথা বলেননি তিনি। এ প্রসঙ্গে আর্জেন্তো বলেছেন, বেনেত তখন অভিনেতা হিসেবে ব্যর্থ ছিল, তাই তাকে আর দুঃখ দিতে চাননি।
তবে যখন আদালতের নোটিশ পেলেন, তখন জনগণকে সেকথা জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর প্রেমিক রাজি হননি। বরং আদালতের বাইরে ব্যাপারটি মিটিয়ে ফেলার জন্য তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। মুঠোফোন বার্তায় তিনি অভিযোগ করেছেন, বেনেত তখন থেকে আর্জেন্তোর নগ্ন ছবি পাঠিয়ে বিরক্ত করছে।
আসিয়া আর্জেন্তো হরর চলচ্চিত্র পরিচালক দারিও আর্জেন্তোর মেয়ে। ইটালির কট্টর ডানপন্থি নেতা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনির কঠোর সমালোচক তিনি।